শ্রীকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ভোটের ফলাফল বাজেট কতটা নির্ধারণ করতে পারে তা নিয়ে অনেক বিতর্ক আছে। ইতিহাস সাক্ষী, জনমুখী বাজেটে যেমন পুরোনো সরকার ক্ষমতায় এসেছে বিপুল ভাবে জয়ী হয়ে, তেমনই আবার উল্টো ফলও ফলেছে। কিন্তু ভোটের বছরে জনমুখী বাজেট পেশ করার ধারায় কখনও ভাটা পড়েনি। আগামী শুক্রবারও যে তার ব্যত্যয় হবে না সেই ইঙ্গিত স্পষ্ট কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী রাধামোহন সিংয়ের কথায়। অতি সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘২০১৯-এর কেন্দ্রীয় বাজেট কৃষকদের জন্য উৎসর্গ করা হবে। ২০২২ সালের মধ্যে দেশের কৃষকদের আয় দ্বিগুণ করার যে প্রতিশ্রুতি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দিয়েছিলেন সেই লক্ষ্যে আমাদের আরও একধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবে এই বাজেট।’বুঝতে ভুল হয় না, গত ডিসেম্বরে গো-বলয়ের তিন গড় গেরুয়া শিবিরের হাতছাড়া হওয়ার খেদ বিজেপি ভুলতে পারেনি। এবং আগামী লোকসভা নির্বাচনে হারের পুনরাবৃত্তি রুখতে মোদী সরকার বাজেটকেই শেষ হাতিয়ার করবে।এই বাজেটে দেশের কৃষক ও ছোট ব্যবসায়ী সম্প্রদায়, মধ্যবিত্ত ও চাকুরিজীবী করদাতা এবং মহিলা সমাজকে তুষ্ট করার প্রস্তাব থাকার যথেষ্ট সম্ভাবনা দেখছেন বিশেষজ্ঞ মহল। সোমবার এক রিপোর্টে ব্রিটিশ ব্যাঙ্কিং ও উপদেষ্টা সংস্থা এইচএসবিসি জানিয়েছে, ‘লোকসভা নির্বাচনের মুখে মোদী সরকারের শেষ বাজেট অন্তর্বর্তী (ভোট-অন-অ্যাকাউন্ট) বাজেট হলেও এটি দলের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’ এই বাজেটে দেশের কৃষক এবং ছোট ব্যবসায়ীদের ক্ষোভ-দুর্দশা দূর করার জন্য নতুন আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণা করতে পারেন অন্তর্বর্তী অর্থমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল।বাজারে ফসল বিক্রি করে উৎপাদন খরচটুকুও তুলতে না-পারায় আর্থিক দুর্দশাগ্রস্ত কৃষক সমাজের ক্ষোভ বাড়ছিল বিজেপির উপর। সেই ক্ষোভকে কাজে লাগিয়ে এবং কৃষিঋণ মকুবের টোপ দিয়ে রাজস্থান-মধ্যপ্রদেশ-ছত্তিসগড়ে কেল্লা ফতে করে কংগ্রেস। সারা দেশে নতুন পরোক্ষ কর ব্যবস্থা জিএসটি শুরু করার পর থেকে কৃষকদের পাশাপাশি ছোট ব্যবসায়ীরাও ক্রমশ বিজেপি-বিমুখ হতে থাকে।কৃষকদের জন্য একাধিক ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য দেড়গুণ এবং ছোট ব্যবসায়ীদের জিএসটিতে অন্তর্ভুক্তিকরণের মাপকাঠি বছরে ২০ লক্ষ টাকার বিক্রি থেকে বাড়িয়ে গত ডিসেম্বরে ৪০ লক্ষ টাকা করা হলেও তাতে কাজের কাজ কিছু হয়নি।অগত্যা বাজেটই ভরসা। কিন্তু প্রশ্ন হল, ভোটের মুখে মোদী সরকার প্রথা মেনে তিন মাসের (এপ্রিল-জুন) খরচ চালানোর অর্থ বরাদ্দের অনুমতি চাইবে সংসদের কাছে? নাকি প্রথার বিচার না-করে ফিনান্স বিল এনে পূর্ণাঙ্গ বাজেটই পেশ করবে? এর আগে অনেক সরকারই ভোটের বছরে ভোট-অন-অ্যাকাউন্ট বাজেটের বদলে প্রথা ভেঙে পূর্ণাঙ্গ বাজেটের মতোই একাধিক আর্থিক নীতির প্রস্তাবসমৃদ্ধ বাজেট পেশ করেছিলেন। এঁদের মধ্যে যশবন্ত সিনহা, যশোবন্ত সিংহের মতো বিজেপি নেতারাও যেমন রয়েছেন, তেমন রয়েছেন প্রণব মুখোপাধ্যায়, পি চিদম্বরমের মতো কংগ্রেস নেতারাও।ফলে, গত বৃহস্পতিবার কংগ্রেস মুখপাত্র মণীশ তিওয়ারি যে প্রশ্ন তোলেন তা ধোপে টেকে না। মণীশ বলেন, ‘সরকার যদি পূর্ণাঙ্গ বাজেট পেশ করেন তবে করা হবে গত ৭০ বছরের সংসদীয় প্রথা লঙ্ঘন করেই।.পাঁচ বছরের জন্য নির্বাচিত হয়ে ছ’বার পূর্ণাঙ্গ বাজেট পেশ করার কোনও নির্বাচনী অধিকার এই সরকারের নেই।’আয়-ব্যয়ের ব্যাপারে নতুন সরকারের হাত-পা আইনের গেরোয় বেঁধে রাখা বিদায়ী সরকারের উচিত নয় বলেই ভোটের বছরে ফিনান্স বিল এনে পূর্ণাঙ্গ বাজেট পেশ করার রীতি নেই। কিন্তু মোদী সরকার কি সেই রীতি মেনে চলবে?এ প্রশ্নের উত্তর জানা যাবে আগামী শুক্রবার, সংসদে বাজেট হলে। তবে, বিজেপি নেতাদের একাংশের দাবি, ভোটের বছরে পূর্ণাঙ্গ বাজেট পেশ করায় যখন কোনও আইনি নিষেধাজ্ঞা নেই তখন ঢালাও জনমুখী প্রকল্প ঘোষণা করতে বাধা কোথায়? বিশেষ করে, কিছুদিন পরেই নির্বাচন কমিশন ভোটের দিন ঘোষণা করলেই যখন সরকার আর কোনও প্রকল্প ঘোষণা করতে পারবে না। সরকারি ভাবে নির্বাচনী যুদ্ধের নির্ঘণ্ট ঘোষণা হওয়ার আগেই তাই বিজেপি চায় বাজেট দিয়েই নির্বাচনী প্রচার শুরু করতে। সেক্ষেত্রে মধ্যবিত্ত এবং চাকুরিজীবীরাও তাঁদের আয়করের ক্ষেত্রে বড়সড় ছাড় প্রত্যাশা করতেই পারেন।
from Eisamay http://bit.ly/2FTvSUt