মানস রায় ■ মালদহক্ষীরসাপাতি কার? বাংলাদেশের চাপাই-নবাবগঞ্জের এই প্রজাতির আম জিওগ্রাফিক্যাল ইন্ডিকেশন (জিআই) পেয়েছে। আম আদমি না-জানলেও তথ্য ঘেঁটে দেখা গেল, মালদহের ক্ষীরসাপাতি সেই শিরোপা পেয়ে গিয়েছে ১০ বছর আগেই। সে খবর জানা ছিল না মালদহের আম উৎপাদক কিংবা কারবারিদেরও।সীমান্ত পার হয়ে বাংলাদেশের জিআই প্রাপ্তির খবর আসার পর তাই সাময়িক হতাশাই দেখা গিয়েছিল এ পারে। ক্ষীরসাপাতি যে মালদহেরই আম। ক্ষীরসাপাতি একাধিক হয়। একটির স্থানীয় নাম, মালদাইয়া ক্ষীরসাপাতি। অন্যটি, কুমারখাঁ ক্ষীরসাপাতি। তবে জনপ্রিয় বেশি প্রথমটিই। এটিই জিআই পেয়েছিল।আরও তথ্য জানার পর মালদহ বরং উচ্ছ্বসিত। মালদহের আরও দু’টি আম ফজলি, লক্ষ্মণভোগেরও জিআই ট্যাগ লেগেছে ১০ বছর আগে। কিন্তু আম নিয়ে ভারত-বাংলাদেশের টানাপোড়েন নতুন মাত্রা পেল প্রতিবেশী দেশের বিশেষ উদ্যোগে। ল্যাংড়া ও আশ্বিনা প্রজাতির আমের জিআই পাওয়ার জন্যও উদ্যোগী হতে নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। অথচ এই দুই প্রজাতির আমের স্বত্ব দাবি করে মালদহও। পরিস্থিতি বুঝে তৎপরতা শুরু করেছে আম ব্যবসায়ীদের সংগঠন।মালদহ জেলা প্রশাসনও প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানিয়েছে। মালদহ ডিস্ট্রিক্ট ম্যাঙ্গো মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক উজ্জ্বল সাহা বলেন, ‘বাংলাদেশের চাপাই-নবাবগঞ্জ কোন ভাবেই প্রমাণ করতে পারবে না যে ল্যাংড়া ও আশ্বিনা তাদের। দেশ স্বাধীন হওয়ার আগে চাপাই-নবাবগঞ্জ মালদহেরই অংশ ছিল। ফলে মালদহের ক্ষীরসাপাতির সঙ্গে ওখানকার ক্ষীরসাপাতির গুণগত কোনও ফারাক ওরা দেখাতেই পারবে না। আমরা আপত্তি জানিয়ে জিআই কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসনকে চিঠি পাঠাচ্ছি।’ উদ্যান পালন দপ্তরের মালদহের অধিকর্তা রুহুল বন্দোপাধ্যায় বলেন, ‘ক্ষীরসাপাতি-সহ মালদহের যে তিনটি আম এর আগে জিআই পেয়েছিল, তার আবেদনকারী ছিল ওয়েস্ট বেঙ্গল সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি কাউন্সিল। তাই জিআই কর্তৃপক্ষের কাছে ওদেরই অভিযোগ জানাতে হবে।’মালদহের জেলাশাসক কৌশিক ভট্টাচার্যও বলেন, ‘খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেব।’ জিআই রেকর্ড থেকে দেখা যাচ্ছে লক্ষ্মণভোগ, ক্ষীরসাপাতি ও ফজলি জিআই পেয়েছিল যথাক্রমে ১১১, ১১২ ও ১১৩ নম্বর আবেদনের ভিত্তিতে। লক্ষ্মণভোগ ও ক্ষীরসাপাতির ক্ষেত্রে এলাকা পশ্চিমবঙ্গ লেখা থাকলেও, ফজলিকে মালদহের ফল হিসেবেই উল্লেখ করা আছে। তা হলে ক্ষীরসাপাতি কী ভাবে বাংলাদেশের আম হয়ে গেল? কৃষি বিজ্ঞানী দীপক নায়েক বলেন, ‘একই পণ্য দুটো আলাদা জায়গা থেকে জিআই পেতে পারে। কিন্তু সেক্ষেত্রে প্রমাণ করতে হবে যে পরে জিআই পাওয়া পণ্যটি আগেরটির থেকে রূপ, রস, স্বাদ, গন্ধে আলাদা।’ ফলে রসগোল্লা নিয়ে বঙ্গ-কলিঙ্গের লড়াইয়ের পর আম নিয়ে লড়াইয়ের ইঙ্গিত দুই বাংলার।
from Eisamay http://bit.ly/2G7AN3i