পর্ন-দর্শন রোখা অসম্ভব, বেড়ি শুধুই কথার কথা

প্রীতমপ্রতীক বসুঅভিপ্রায় ছিল মূলে আঘাত। উদ্যোগ ছিল ষোলো আনা। কিন্তু কাজ হয়নি বিন্দুমাত্র। ভবিষ্যতে হবে, এমন সম্ভাবনা উজ্জ্বল, তা-ও নয়। উল্টে, নিষেধাজ্ঞার বেড়ি পরাতে গিয়ে ফল হয়েছে বিপরীত।পর্নোগ্রাফি সংক্রান্ত ওয়েবসাইট বন্ধ করার নির্দেশ জারির ঠিক তিন মাস পরে এটাই ভারতের চিত্র। ২০১৮ সালের ২৭ অক্টোবর কেন্দ্রীয় তথ্যসম্প্রচার মন্ত্রকের তরফে সব ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারের উদ্দেশে ৮২৭টি পর্ন-সাইট বন্ধের নির্দেশিকা জারি করা হয়। তাতে ফল কী হল? ‘সিম্পল ওয়েব’-এর করা একটি সমীক্ষায় বলা হচ্ছে, পর্ন-দর্শন থেকে ভারতীয়দের ঠেকিয়ে রাখা তো যায়ইনি, বরং ঘটেছে উল্টোটা। ২০১৮-র জানুয়ারি থেকে অক্টোবরের মধ্যে গড়ে প্রতি মাসে যে সংখ্যক মানুষ পর্নোগ্রাফি দেখেছিলেন, তার থেকে বেশি মানুষ পর্ন দেখেছেন নভেম্বর ও ডিসেম্বরে। চলতি জানুয়ারিতেও এই গ্রাফের ঊর্ধ্বমুখী দৌড় জারি থাকবে বলে মনে করা হচ্ছে। অর্থাৎ, পর্নোগ্রাফিক সাইট বন্ধ করে দেশবাসীকে ‘শুদ্ধ’ করার উদ্যোগ আপাতত ব্যর্থ।সমীক্ষায় দাবি, নির্দেশিকার জারির পরে নিষিদ্ধ সাইটগুলিতে দর্শকের সংখ্যা গড়ে ০.৮ শতাংশ কমেছিল। কিন্তু সার্বিক ভাবে পর্নোগ্রাফি দেখার হার বেড়ে যায় প্রক্সি নেটওয়ার্কের জন্য। ২০১৮-র অক্টোবর পর্যন্ত এই প্রক্সি নেটওয়ার্কের মাধ্যমে যেখানে গড়ে প্রতি মাসে ৬ লক্ষ ভিজিট হয়েছিল পর্ন-সাইটগুলিতে, নভেম্বর ও ডিসেম্বরে সেটাই একধাক্কায় সামগ্রিক হিসেবে বেড়ে ২০০ কোটিতে দাঁড়ায়।সাইবার বিশেষজ্ঞরা ঠিক এ কথাই বলছেন। তাঁদের বক্তব্য, এ দেশে পর্নোগ্রাফিক সাইট নিষিদ্ধ করা এক প্রকার অসম্ভব। তার কারণ প্রক্সি নেটওয়ার্ক। সাইবার বিশেষজ্ঞ বিভাস চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘একটি সাইট বন্ধ করা গেল। কিন্তু সেই সঙ্গে কতগুলি ছায়া-সাইট (মিরর ওয়েব) তৈরি হয়ে যায়, সে হিসেব করা খুব কঠিন। সেগুলির মাধ্যমে পর্নোগ্রাফি দেখা যায়। অনেকটা ছদ্মবেশের মতো। এ ছাড়া ডার্ক ওয়েব তো রয়েইছে। নেটওয়ার্কের জটিল কারিকুরিতে অনেক বন্ধ দরজাই খোলা যায়। তাই পর্ন সাইট পুরোপুরি বন্ধ করা একপ্রকার অসম্ভব। তবে চেষ্টা চলছে। দেখা যাক, কী হয়।’সাইবার আইন বিশেষজ্ঞ রাজর্ষি রায়চৌধুরী একটি অন্য প্রসঙ্গে গুরুত্ব দিচ্ছেন। তাঁর বক্তব্য, ‘পর্নোগ্রাফি দেখা তো একটা সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে। প্রচুর মানুষ দেখছেন। ইন্টারনেটের ব্যবহার বিশ্লেষণ করে তা বহুবার প্রমাণিত। এই অবস্থায় পর্নোগ্রাফি এ ভাবে বন্ধ করা যায় নাকি?’ তাঁর বক্তব্য, ‘শুধুমাত্র ওয়েবসাইটের উপরে নিষেধাজ্ঞা বলবৎ করলেই যে পর্নোগ্রাফিক কনটেন্ট দেখা আটকানো যাবে, এমন নয়। এখন ভিডিয়ো শেয়ার করার একাধিক উপায় রয়েছে। রয়েছে একাধিক ভিডিয়ো কলিং সাইট। সেগুলি মনে রাখা প্রয়োজন। কাজেই পর্নোগ্রাফিক কনটেন্ট দেখা থেকে দেশবাসীকে বিরত রাখা এ ভাবে সম্ভব নয় বলেই মনে করি।’

from Eisamay http://bit.ly/2FU9BWA

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.