বিরল নিদানে লেপার্ড ধরো বা মারো

এই সময়, আলিপুরদুয়ার: ডুয়ার্সের ‘নরখাদক’ চিতাবাঘকে প্রাকৃতিক পরিবেশ থেকে জীবিত বা মৃত অবস্থায় অপসারণের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিল বন দপ্তর। রাজ্যে এই প্রথমবার ‘নরখাদক’ হয়ে উঠেছে কোনও চিতাবাঘ। অনেক চেষ্টার পরও তার নাগাল না-মেলায়, আর ঝুঁকি নিতে চাইছে না বন দপ্তর। রাজ্যে হাতি ছাড়া অন্য বন্যপ্রাণীকে প্রয়োজনে হত্যার নির্দেশ এই প্রথম।গত দেড় মাসে মাদারিহাটের ধুমচিপাড়া, গ্যারগেন্ডা, রামঝোরা ও তুলসিপাড়া চা-বাগান এলাকার ত্রাস হয়ে উঠেছে একটি পূর্ণবয়স্ক পুরুষ চিতাবাঘ। ইতিমধ্যেই ওই চিতাবাঘের আক্রমণে মৃত্যু হয়েছে তিন শিশু-কিশোরের। গুরুতর জখম হয়েছেন আরও দু’জন। পরিস্থিতি এতটা ভয়াবহ হয়ে ওঠায় তৎপর হয়ে ওঠে বন দপ্তর। টানা এক সপ্তাহ ওই এলাকাগুলি রেইকি করে নরখাদক চিতাবাঘটিকে চিহ্নিত করার পর অবিলম্বে তাকে অপসারণের আবেদন জানিয়ে গত শনিবার রাজ্যের বন্যপ্রাণ শাখার প্রধান মুখ্য বনপাল রবিকান্ত সিনহার কাছে লিখিত রিপোর্ট পাঠান উত্তরবঙ্গের বন্যপ্রাণ শাখার মুখ্য বনপাল উজ্জ্বল ঘোষ। সোমবার ওই আবেদনে সাড়া দিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন রবিকান্ত সিনহা। তাঁর লিখিত নির্দেশ হাতে পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হবে বলে জানিয়েছেন উজ্জ্বল ঘোষ। তিনি বলেন, ‘ওই পুরুষ চিতাবাঘটি আকারে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের থেকে ছোট নয়। আর স্বভাবে এতটাই ধূর্ত, যে কোনও ভাবেই খাঁচার পাশে ভিড়তে চায় না। সবার চোখকে ফাঁকি দিয়ে অনবরত এলাকা বদল করে চলেছে বাঘটি।’ এর আগে একের পর এক মানুষ হত্যার দায়ে ২০১৬ সালে বর্ধমানে একটি হাতিকে মারতে বাধ্য হয়েছিল বন দপ্তর।এ বার চিতাবাঘের ক্ষেত্রেও তেমনই নির্দেশ এল। এলাকা থেকে জীবিত অবস্থায় সরানো না-গেলে মেরে ফেলা হবে নরখাদক চিতাবাঘকে।রবিকান্ত বলেন, ‘পরিস্থিতি যা তৈরি হয়েছে, তাতে চরম সিদ্ধান্ত নেওয়া ছাড়া আমাদের হাতে আর কোনও পথ ছিল না। প্রথমে জীবিত অবস্থায় ধরার চেষ্টা করা হবে। তাতে ব্যর্থ হলে মেরে ফেলার নির্দেশ দিয়েছি। বাইরে থেকে শিকারি বা বিশেষজ্ঞ আনা হলে অযথা বিতর্ক বা ঝামেলা হতে পারে। তাই আমাদের রাজ্যের চার জন বিশেষজ্ঞ শ্যুটারের মধ্যে যিনি সবথেকে অভিজ্ঞ, তাঁকে ওই দায়িত্ব দেওয়া হবে। বেহুঁশ করা বা শিকারের যাবতীয় হাতিয়ার আমাদের কাছে আছে।’যদিও রাজ্যের প্রাক্তন প্রধান মুখ্য বনপাল সম্পৎ সিং বিস্ত বলেন, ‘যাই হোক, মানুষকে বিপদ থেকে বাঁচতে শেষ পর্যন্ত একটা সিদ্ধান্তে আসতে পেরেছে বন দপ্তর। তবে কাজটা খুবই কঠিন। কারণ বাঘ অথবা চিতাবাঘকে প্রাকৃতিক পরিবেশে বেহুঁশ করা বা মেরে ফেলা অত্যন্ত দুরূহ কাজ। তার জন্য অভিজ্ঞ ও শার্প শ্যুটারের প্রয়োজন আছে। আমি যতদূর জানি, আমাদের দপ্তরের হাতে যে ৩১৫টি বন্দুক রয়েছে, তা দিয়ে কখনোই বাঘ বা চিতাবাঘ মারা সম্ভব নয়। আশা করছি, বিষয়টা বনকর্তারা মাথায় রাখবেন। আর হাতিরা আকারে বড় হওয়ায় যত সহজে কাজটা করা যায়, লেপার্ডদের ক্ষেত্রে কাজটা অত্যন্ত কঠিন ও ঝুঁকিপূর্ণ। তবে আশা করব, শেষ পর্যন্ত লেপার্ডটিকে বাঁচিয়ে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করবে বন দপ্তর।’রাজ্যের বন্যপ্রাণ শাখার প্রাক্তন প্রধান মুখ্য বনপাল সীতাংশুবিকাশ মণ্ডল বলেন, ‘প্রাকৃতিক পরিবেশে থাকা লেপার্ডকে বাগে আনা শুধু দুরূহ কাজই নয়, তার থেকেও অনেক বেশি কিছু। লেপার্ডের মত ক্ষিপ্র জন্তুকে কাবু করতে হলে প্রচুর অভিজ্ঞতা সম্পন্ন একাধিক শিকারির সহায়তা প্রয়োজন। আশা করছি, বন দপ্তরের কর্তারা বিষয়টি মাথায় রাখবেন। না হলে বিপদ আসতে সময় লাগবে না।’চা-বাগানে চিতাবাঘের হানায় একাধিক মৃত্যুর ঘটনায় মারমুখী হয়ে উঠেছে মানুষও। সে প্রসঙ্গ টেনেই উজ্জ্বল ঘোষ বলেন, ‘চা বাগানগুলিতে মানুষ-চিতাবাঘের সংঘাত এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, তাতে ওই একটি লেপার্ডকে হটিয়ে দিলেই সমস্যার সমাধান কত দূর হবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।’

from Eisamay http://bit.ly/2CPT6a2

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.