মানস রায় ■ মালদহমালদহে গনি খান চৌধুরী পরিবারের প্রাসাদ অনেক দিন পর এ দিন লোকে গমগম করল। কিন্তু টুকরো হয়ে গেল কোতুয়ালির সিং দরজার আধিপত্য। মৌসম ইতিমধ্যে ওই দরজার পাশে নিজের জন্য আর একটি ফটক বানিয়ে ফেলেছেন।গনির মৃত্যুর পর অনেক দিন সিং দরজাটাই ছিল বাড়িটায় ঢোকার একমাত্র পথ। তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পর গনি ভ্রাতা আবু নাসের খান চৌধুরী অর্থাৎ লেবু নিজের আলাদা প্রবেশপথ করে নিলেও সিং দরজার আভিজাত্য ছিল অটুটই। আর এক গনি ভ্রাতা আবু হাসেম খান চৌধুরী অর্থাৎ ডালু, সাংসদ মৌসম নূর, বিধায়ক ঈশা খান-সহ পরিবারের অন্যরা এই দরজাটাই ব্যবহার করতেন। লেবু ছাড়া বাকিরা কংগ্রেসেই। মৌসমের দলবদলের সঙ্গে সঙ্গে সেই রাজনীতিতে যেমন চিড় ধরল, গুরুত্ব হারাল সিং দরজাও।মঙ্গলবার তাঁকে ঘিরে তৃণমূলের যতই ভিড় হোক না-কেন, চোখ টানল এই দরজার বিভাজনও। যদিও এ দিন তাঁর সঙ্গে সিং দরজা দিয়েই কোতুয়ালিতে ঢোকেন তৃণমূল কর্মীরা। বড় মামা গনি খান ও মা রুবি নূরের ছবি টাঙানো বারান্দায় মুহুর্তের জন্য থমকে দাঁড়ালেন মৌসম। তার পর পা বাড়ালেন নিজের তৈরি নতুন দরজাটার দিকে। কোতুয়ালিতে আধিপত্য প্রতিষ্ঠায় উত্তর মালদহের সাংসদ মৌসম এখন মরিয়া। তিনি মামা ডালু ও ভাই ঈশাকেও তৃণমূলে আনতে চান। মৌসম বলেন, ‘ওঁদের অনেক বুঝিয়েও কনভিন্সড করাতে পারিনি। এ বার বোঝাবো, দেশের জন্যও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্ব প্রয়োজন। তাই গোটা পরিবারের সাপোর্ট চাই।’ তাঁর দাবি, মালদহে যে ক’জন কংগ্রেস বিধায়ক রয়েছেন, তাঁরাও চলে আসবেন তৃণমূলে।মৌসমের মামাতো ভাই তথা সুজাপুরের কংগ্রেস বিধায়ক ঈশা খান চৌধুরী পাল্টা বলেন, ‘এ বার আমরা কংগ্রেসের কর্মসূচিগুলো নিতে পারবো। যেটা মৌসম হতে দিচ্ছিলেন না।’ মালতিপুরের কংগ্রেস বিধায়ক আলবিরুনীর বক্তব্য, ‘গনি খানের পরিবারে থেকে এত বড় বেইমানি করার উত্তর ভোটে পাবেন উনি।’তৃণমূলে থাকলেও আবু নাসের অর্থাৎ লেবুও ভাগ্নির সমালোচনা করেন। তৃণমূলের এই প্রাক্তন মন্ত্রীর বক্তব্য, ‘মৌসম সুবিধাভোগী। ওর মা এই বংশের মেয়ে ছিল, ও নয়। ওর এই বংশের উত্তরাধিকারী বলে পরিচয় দেওয়া উচিত নয়।’ পরিবারে যত বাধাই পান, মৌসম আসছেন জেনে মালদহ টাউন স্টেশনে ঘাসফুল ঝান্ডাধারীদের ভিড় আছড়ে পড়ে। ট্রেন থেকে নেমে ভিড়ে ভাসতে ভাসতে হুটখোলা গাড়িতে বাড়ি শহর ঘুরে তৃণমূলের জেলা সভাপতির দপ্তর ছুঁয়ে কোতুয়ালি পৌঁছন। দলের জেলা সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন, জেলা পরিষদের সভাধিপতি গৌরচন্দ্র মণ্ডল, যুব সভাপতি অম্লান ভাদুড়ি-সহ প্রায় সব নেতারা সঙ্গে থাকলেও পরিষ্কার, মালদহ তৃণমূলে নতুন ভরকেন্দ্র তৈরি হল। মৌসমকে এ দিন যাঁরা সঙ্গ দিলেন, তাদের অনেকে কয়েক দিন আগেও কংগ্রেসেই ছিলেন। সব দেখে মৌসমও বলেই ফেললেন, ‘মালদহে আসার সময় ভয় ছিল, মানুষ কীভাবে নেবে? এখন বুঝতেই পারছি না যে দল বদলেছি। ফলে আবার সবাই মিলে কাজ করব নতুন উদ্যমে।’
from Eisamay http://bit.ly/2RWHEnp